শুধু বাংলাদেশ নয়। শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন সমস্ত বিশ্ব জুড়ে একটা বিভীষিকাময় ট্যাবু সাবজেক্ট! সব দেশে, সব কালে, প্রায় সব পরিবারে অন্তত একটা ঘটনা পাওয়া যাবে, যেখানে কোন না কোন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার।
ক্রমশই বাড়ছে শিশু ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি। একটা মেয়ে শিশু তার আপন মানুষদের কাছেই এখন নিরাপদ না। শুধুমাত্র সে একটি মেয়ে, এটাই তার দোষ। সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়ে শিশুরা হচ্ছে হয়রানির শিকার। এখন আমাদের সমাজে একটা মেয়ে শিশুর নিরাপত্তা একটা ছেলের তুলনায় ঝুঁকির সম্মুখীন।
যৌন নির্যাতন ও এসবে জড়িত লোকজন অনেক সময় নিজের পরিবারে থাকা আত্মীয় স্বজনদের মধ্যেও হয়। এমনও দেখা গেছে যে, নিজের মামা বা চাচা দ্বারা অনেক শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয় কিন্তু ভয়ে বা লজ্জায় কেউ তা বলতেও পারেনা।
যে শিশুটির সাথে এ ধরণের ঘটনা ঘটে এবং শিশুটি যদি বেঁচে থাকে সে কিন্তু সারা জীবন ধরে একজন খন্ডিত মানব হিসেবে রয়ে যায়! প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত নারকীয় যন্ত্রনায় কাটতে থাকে একটি রক্তাক্ত আত্মা, একটি জীব নয়, জীবাশ্ম ।
অভিভাবকরাই পারে তাদের মেয়ে শিশুর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে।
১. যৌন শিক্ষা
প্রথম যৌন শিক্ষাটা যেন সে বাবা মার কাছ থেকেই পায় সে ব্যবস্থা করুন। আপনি যদি চিন্তা করেন সে পরিবেশ থেকে শিখে নিবে তবে জেনে রাখুন, তার ভুল শেখার সম্ভাবনা বেশি।
২. বিশ্বস্ত অভিভাবক
গ্রাম কিংবা শহরে এ ক্ষেত্রে এক মাত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে তার অভিভাবক। অভিভাবকরাই পারে তাদের মেয়ে শিশুর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে। কারণ অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনে চাকরি করে বিধায় অন্য কারো উপর বাচ্চার দায়িত্ব দিয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু এখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় মেয়ে শিশুর নিরাপত্তা যথেষ্ট ঝুঁকির সম্মুখীন তাই বাবা-মার উচিৎ বিশ্বস্ত কারো কাছে মেয়ে শিশুর দায়িত্ব দিয়ে যাওয়া যেমন নানী বা দাদী এরকম কোন অভিভাবক।
৩. স্কুল বা কোচিং
যদি কোন কোচিং বা স্পোর্টস ক্লাবে কোন কোচের অধীনে থাকে তাহলে যেন সেদিকে খেয়াল রাখা যে, সেই কোচটি কেমন ব্যক্তি, আপনার শিশুর প্রতি তার আচরণ কেমন। এছাড়া আরও যা করতে হবে, মেয়েকে সম্ভব হলে বাবা অথবা মা নিজে গিয়ে স্কুলে পোঁছে দিতে হবে এবং মাঝেমাঝে স্কুলে ফোন দিয়ে বাচ্চার খোঁজ খবর রাখতে হবে।
৪. সবার মনোভাব
বাসায় কোনও পুরুষ আত্মীয়, তা সে যত আপন আত্মীয়ই হোক না কেন মেয়েকে কখনও তার সাথে একা কোথাও পাঠাবেন না। কিংবা একা রেখে যাবেন না। আপনার কন্যার প্রতি আশেপাশের সবার মনোভাবের দিকে মনযোগী হন।
৫. ব্যক্তির কোলে
অনেক দূরের পথ যেতে বা যে কোন স্থানে কোন ব্যক্তির কোলে তাকে বসতে দিবেন না।
৬. কাপড় বদলাতে
তার বয়স যত কম হোক না কেন, বাইরের মানুষের সামনে তাকে কাপড় বদলাতে দিবেন না।
৭. খেলার ধরণ
বন্ধুদের সাথে বাইরে খেলতে গেলে সে কার সাথে কি ধরণের খেলা খেলছে সে ব্যাপারে কড়া নজর রাখুন।
৮. ইচ্ছার মূল্যায়ন
কোন বয়স্ক ব্যক্তির সাথে যদি সে বেড়াতে যেতে না চায় তাকে জোর করে পাঠাবেন না। তার এই অনিচ্ছার পিছনে কোন কারণ থাকতে পারে।
৯. অভিযোগের প্রতি গুরুত্ব
আপনার সন্তান যদি কোন বয়স্ক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আপনাকে কোন অভিযোগ করে তা উড়িয়ে দিবেন না। এছাড়াও তার যে কোন প্রশ্ন মন দিয়ে শুনুন এবং ভাল করে বুঝিয়ে দিন।
১০. কাজের লোকদের প্রতি খেয়াল
ঘরের কাজের লোকদের দিকে খেয়াল রাখুন। অনেক সময় তারাও নানা আজে-বাজে জিনিস আপনার সন্তানকে শেখাতে পারে।
১১. সাবধান করা
৩-৪ বৎসর হলেই আপনার সন্তানকে শিখিয়ে দিন শরীরের গোপন অঙ্গগুলো কিভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং ঐ স্থানগুলো যেন বাইরের কেউ হাত না দেয় সে ব্যাপারেও সাবধান করে দিন।।
১২.বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
সব থেকে জরুরি যা তা হল, আপনি আপনার মেয়ের সাথে সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখবেন। নিজের সন্তানদের সময় দিন। নতুবা তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। এই সুযোগটা নিয়ে তখন যে কেউ, যে কোন সময় অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারে। আজই আপনার সন্তানকে সঠিক শিক্ষাটি দিন। বন্ধুর মতো সম্পর্ক হলে আপনার মেয়ের মধ্যে সংকোচ বা ভয় কেটে যাবে।
নিরাপদে থাকুন। কোন আংকেল বা ভাইয়া যদি তোমাকে খারাপভাবে স্পর্শ করে তাহলে তুমি আমাকে বাসায় এসে জানাবে। এরকম করে বলা থাকলে শিশুর মন আগে থেকেই সাবধান থাকবে বা আপনার কথাটি তার মনে থাকবে। মেয়ে শিশুটির নিরাপত্তা কিন্তু পরিবারকেই নিশ্চিত করতে হবে। এর সাথে সাথে সামাজে সবার উচিৎ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।