প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কমে গিয়েছে মানুষের কায়িকশ্রম। বেশির ভাগ কাজই দেখা যায় চেয়ার-টেবিলভিত্তিক। অনরবরত বসে থাকার ফলে পিঠে ব্যথা করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে সামান্য বিশ্রাম আপনাকে দিতে পারে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি। কিন্তু ব্যথা যখন ব্যাধির আকার ধারণ করে, তখন বিশ্রামের পাশাপাশি মেনে চলতে হয় বেশ কিছু নিয়ম-কানুন। পিঠে ব্যাথা নিম্নোক্ত কারণসমূহের জন্যে হতে পারে-
– দীর্ঘক্ষণ এক অবস্থায় কম্পিউটারে কাজ করলে
– দীর্ঘসময় বালিশ ছাড়া কাত হয়ে ঘুমালে
– কাঁধের জোড়া একবার বা অধিকবার স্থানচ্যুতি হলে
– রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অসটিওআর্থ্রাইটিস ও প্রদাহ আর্থ্রাইটিস হলে
– আঘাত বা রোগের কারণে জোড়ার আবরণ, লিগামেন্ট, টেনডেন ও পেশি দুর্বল হলে বা ছিঁড়ে গেলে
– পেশি, টেনডেন ও বার্সার প্রদাহ
– কলার বোন ভাঙলে, ছোট হয়ে জোড়া লাগলে বা স্থানচ্যুতি হলে
– ক্যালসিয়াম কমে হাড় ভঙ্গুর (অসটিওপোরোসিস) হলে
– রোগ বা আঘাতের কারণে হাড় ভাঙ্গলে
– হাড়ের ইনফেকশন ও টিউমার
– স্নায়ু পিন্চড (ইনট্রাপমেন্ট) বা ইনজুরি
– পিত্তথলি, ফুসফুস এবং হৃদরোগের কারণে ও স্ক্যাপুলায় ব্যথা হলে, একে রেফার্ড পেইন বলে
– ভারী জিনিস বেশিক্ষণ টানাটানি করলে পিঠের ব্যথা হতে পারে
পিঠের ব্যাথা থেকে প্রতিকার পেতে এই আটটি পরামর্শ আপনার জন্য ফলপ্রসূ হতে পারে –
১. কাঠের বা প্লাস্টিকের চেয়ার-
অফিসে অনেকক্ষণ টানা বসে থাকবেন না। মাঝে মাঝে উঠুন, একটু হাঁটাচলা করুন। আর গদি চেয়ার পরিহার করে চেষ্টা করুন কাঠের অথবা প্লাস্টিকের চেয়ার ব্যবহার করতে।
২. পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ-
পিঠের ব্যথা খুব বেশি হলে প্রথম কাজ হলো পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ করা। যে কাজ একেবারে না করলেই নয় এমন কাজ ছাড়া পূর্ণ বিশ্রাম নিন অন্তত দুদিন।
৩. ম্যাসাজ-
ব্যথার জায়গার পাশে বরফ রেখে জায়গাটি ৭-৮ মিনিট ম্যাসাজ করুন, আরাম পাবেন। এতে যদি ব্যথা ভালো না হয় তাহলে গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে গরম ভাপ দিয়ে দেখতে পারেন।
৪. ব্যায়াম-
পিঠব্যথার অন্যতম কারণ হলো মাংসপেশীর জড়তা। বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর দুই হাঁটু বিছানা থেকে তুলে বুকের দিকে ভাঁজ করুন, হালকা চাপ প্রয়োগ করুন এবং ছেড়ে দিন। এভাবে কয়েকবার করুন, আরাম পাবেন।
৫. ঘুম থেকে উঠার সময়-
গবেষণায় দেখা গেছে,ব্যথা উপশমের জন্য এটা বেশ কার্যকর। বিছানা থেকে চট করে উঠে না পড়ে গড়িয়ে নামুন। বিছানার প্রান্তে চলে আসার পর পা নামিয়ে দিন নিচে এবং দেহকে বিছানা থেকে তুলে আনুন।
৬. ফোমের বা নরম বিছানা-
ফোমের বা নরম বিছানা পরিহার করুন। সমতল এবং শক্ত বিছানায় শোবার অভ্যাস করুন।
৭. হাঁটুর নিচে বালিশ-
মাথার নিচে বালিশ রেখে চিত হয়ে শুয়ে দুই হাঁটুর নিচে বালিশ রাখুন। এ পদ্ধতিতে শোয়া ব্যথা উপশমের জন্য কার্যকর।
৮. সুন্দর স্মৃতি স্মরণ-
কাজের সময় ব্যথা অনুভূত হলে নিজের সুন্দর স্মৃতিগুলো মনে করুন, দেখবেন ব্যথা কম টের পাচ্ছেন!
খুব বেশি পিঠের ব্যথার জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত ফলদায়ক। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ সাপেক্ষে। আর পিঠের ব্যথা সমস্যা নিয়মিত দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। ব্যথা কমানোর জন্য ফিটনেস এক্সপার্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করার জন্য।